No Translation Available

বসন্তে অন্য রকম রাতারগুল

October 11, 2023 9:55 am

বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর যে খেলা তা পুরোটা অনুভব করতে চাইলে ইটবাঁধাই ঘরের ভেতর থাকলে হয় না। চলে যেতে হয় প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। ফুল-বন-নদী-হাওরের কাছে গেলে বোঝা যায় বাংলাদেশ গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতে কতটা রূপ বদলায়। বাংলাদেশের পুণ্যভূমি নামে খ্যাত সিলেট শহরে এই সময়ে যেতে চাইলে বন্ধুরা এককথায় বলতে পারি, যদি সিলেটের আসল সৌন্দর্য দেখতে চাও তো বর্ষাতে যাও।

featured-image

কিন্তু আমি এই ফাল্গুনেই ঘুরে এলাম হাওর-বিলের দেশ সিলেট আর ক্যামেরায় বন্দি করলাম নৈসর্গিক কিছু ছবি। সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় জায়গার নাম রাতারগুল সোয়ম্প ফরেস্ট। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় পাটিগাছ ‘রাতা গাছ’ নামে পরিচিত। এর নামানুসারে বনটির নাম রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

পর্যটকরা সাধারণত বৃষ্টির দিনই বেছে নেন বাংলাদেশের আমাজনখ্যাত বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কারণ ওই সময়টায় ঘাটে বেশ পানি থাকে। গলা পর্যন্ত পানিতে নৌকায় বসে অরণ্যে ঘুরে ঘুরে প্রাণী দেখতে বেশ লাগে সে সময়টায়। ভাসমান অবস্থায় চা পান করতে করতে কেউ হয়তো মাঝির কাছ থেকে বইঠা নিয়ে নিজেই আপন মনে বাইতে থাকে। গাছের ডালে পেঁচিয়ে থাকা সাপ দেখেও অনেকে শিরশিরে অনুভূতি পায়।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

কিন্তু বসন্তকালে রাতারগুলের আবেদন পুরোপুরি ভিন্ন। গোয়াইনঘাট থেকে নৌকা নিয়ে আপনি বনের কাছাকাছি চলে যেতে পারবেন। তারপর শুরু হবে হাঁটাপথ। আমি তো ঘাট থেকে যখন নৌকায় উঠি, বেলা তখন গড়িয়ে গেছে অনেকটা।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

তীব্র রোদে ছাউনি ছাড়া নৌকায় বসলেও বসন্তের রোদ এত গায়ে লাগছিল না। ইঞ্জিনচালিত নৌকা হওয়ায় মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম বনের ভেতর। এরপর করচ, হিজল, গজারি- এমন অনেক নাম না-জানা গাছের ভেতর দিয়ে হাঁটছি আর পথের ওপর পড়ে থাকা শুকনো পাতা মাড়িয়ে যাচ্ছি। চারদিকে নানা জাতের পাখি ডাকছে। সূর্যের আলোকে আড়াল করে রেখেছে বিশাল অরণ্য। ভেতর থেকে বোঝার উপায় নেই, ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন রাতারগুলের আয়তন ৩৩২৫.৬১ একর। আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ২০৪.২৫ হেক্টর বনভূমিকে ৩১ মে ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করে। এটি পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি জলাবনের মধ্যে অন্যতম। এই বনকে বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের অধীনে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে নৌকার মাঝি জুনায়েদ। তিনি মোটামুটি পুরো বন চষে বেড়ান দিনে তিন থেকে চারবার। বনের ভেতর উঁকি দিতেই মুগ্ধতা নেমে এলো চোখে। ছোট একটা বিল চারদিকে বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা। পানি কোনোভাবেই ওপরে উঠে আসা সম্ভব নয় যতক্ষণ না এখানে অধিক বৃষ্টি হবে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে পর্যটকরা মনের আনন্দে গাছের শেকড়ের পাশ দিয়ে ঘুরে ঘুরে বন দেখছেন। আমিও নেমে গেলাম পানিতে নৌকা বাইতে। বসন্তের হালকা বাতাস বইছে, না গরম না শীত। অসাধারণ আবহাওয়া পুরো বনজুড়ে। তখনই মনে হলো, যারা নাটক-সিনেমার শুটিং করতে চান তাদের জন্য রাতারগুল একটি দারুণ স্পট হবে। বর্ষাকালে অবশ্য এমন দৃশ্য পাওয়া যাবে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি নিয়ে এমন শুকনো মৌসুমে পুরো টিম নিয়ে চলে আসতে পারেন এমন দৃষ্টি জুড়িয়ে যাওয়া নৈসর্গের মাঝে। তবে এ জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা গুনে গুনে দিতে হবে।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব মাত্র ২৬ কিলোমিটার। সিলেটের কদমতলীতে বাস থেকে নেমে আমি সিএনজি ভাড়া নিয়েছিলাম সারা দিনের জন্য। ইচ্ছা করলে আপনি খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের মাঝের রাস্তা দিয়ে খুব সহজে অল্প সময়ে রাতারগুল পৌঁছতে পারবেন। সারা দিনের জন্য অটোরিকশা ভাড়া করতে পারেন। আশা করি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় হয়ে যাবে, যা নিয়ে আপনি আবার সাদা পাথরের ভোলাগঞ্জও ঘুরে আসতে পারবেন। গোয়াইনঘাটে একটি নোটিশ দেওয়া আছে নৌকা ভাড়াসংক্রান্ত। যদিও সেগুলো ঠিক করে কেউ মানে না। পর্যটকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খসিয়ে নিচ্ছেন ইজারাদাররা। আর বিদেশি পর্যটক হলে তো কথাই নেই। তাই বনে প্রবেশের পূর্বে ভাড়া ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

রাতে থাকার জন্য সিলেট শহরটাকেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যকর মনে করি। পানসি রেঁস্তোরা বা ভোজন বাড়ির খাবার আমার বেশ লেগেছে। তারা নানাবিধ ভর্তা করে থাকে। গেল বছর করোনায় হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হলেও ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোটেলের রুম পেতে আমাকে এক মাস আগেই বুকিং দিতে হয়েছে। মিরা বাজারে অবস্থিত মিরা গার্ডেনে কাটানো সময়টা বেশ উপভোগ্য ছিল। তাদের আতিথেয়তা মনে রাখার মতো। অভিজাত ফার্নিচারে পুরো হোটেল সাজানো। ছিমছাম এবং নিরিবিলি। বাজার থেক দূরে হওয়ায় কোনো হট্টগোল নেই। আমি দুই রাতের জন্য এক্সিকিউটিভ রুমে ছিলাম মোট ৭০০০ টাকা দিয়ে। হয়তো সিজন অনুযায়ী ভাড়া কমতে বা বাড়তে পারে। তবে এই ভাড়ায় বেশ আরামেই ছিলাম। বুফে ব্রেকফাস্ট বেশ উপভোগ্য ছিল। এ ছাড়া লালাবাজার এবং দরগা রোডে কম ভাড়ায় বেশ কিছু মানসম্পন্ন হোটেল রয়েছে। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের হোটেল পাবেন । হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল স্টার প্যাসিফিক, হোটেল সিলেট ইন, সুরমা ভ্যালি গেস্ট হাউস- এই হোটেলগুলো বেশ জনপ্রিয়।

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

পরিশেষে রাতারগুল শুধু বন নয়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করবার জলাধার। তাই ঘুরতে গিয়ে চিপসের প্যাকেট বা টিস্যু পেপার বনের ভেতর এদিক-ওদিন না ফেলে বনের পরিবেশ রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

কালের কন্ঠ

Rate this Blog

Overall Score: 10.0 / 10 |