No Translation Available

কৃতি সন্তান বনাম স্যার

October 29, 2023 1:35 pm

একটি স্যার বিষয়ক অণুগল্প

featured-image

এক বাবার পাঁচ ছেলে ছিল।বাবা দেখলেন তার প্রত্যেক ছেলে অসাধারণ মেধাবী, বড়টা সবচেয়ে মেধাবী। একদিন বাবা সবাইকে ডেকে একেএকে প্রশ্ন করতে লাগলেন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে।কথায় বলে উঠন্তমূল পত্তন্তেই চেনা যায়। বাবা আরোহ পদ্ধতিতে শুরু করলেন,প্রথমেই ৫ম পুত্রকে জিজ্ঞেস করল,--

বাবাঃ বলত সোনা,বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? বুদ্ধিমান ছেলের বুদ্ধিমান উত্তর,বাবা,এযুগে ডাক্তারের অর্থোপার্জন সবচেয়ে বেশি, রুগী দেখেও পয়সা টেস্টেও পয়সা,,,

বাবাঃ ব্যস ব্যস আর বলতে হবেনা,শুধু পয়সা আর পয়সা! তুমি অনেক বুদ্ধিমান সোনা!

এবার ৪র্থ ছেলেকে ডেকে---

বাবাঃ বলতো বাবা, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?

ছেলেঃ কেন বাবা, বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গণপূর্ততে চাকুরী,,,

বাবাঃ হুম,বুঝে গেছি, তুমি আরও বুদ্ধিমান!

বাবা এবার ৩য়কে ডেকে জিজ্ঞেস করল,,

বাবাঃ বলতো বাবা, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?

ছেলেঃ কেন বাবা, তুমিইতো বল,মাছের রাজা ইলিশ দেশের রাজা পুলিশ! বাবা,আমি বিসিএস পুলিশ হয়ে আইজি হতে চাই।

বাবা খুবই চমৎকৃত হয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন!

এবার ২য় পুত্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই ঝটপট উত্তর,কেন বাবা তুমিইতো বলেছে সচিবের উপর চাকুরী নাই, দেশের সকল ফাইল তাদের হাত দিয়ে ছাড় হয় রিটায়ার্ডএর পর আবার টেকনোক্রেট মন্ত্রীও হয়!

বাবা চিন্তা করে দেখলেন তার সন্তানেররা খুবই মেধাবী ও বুদ্ধিমান। এবার বড়র পালা,বাবা জানে তার সোনার টুকরো ছেলে,জন্মের সময় চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল,মনে পড়ে প্রায় একমন মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল।সবাই বলেছিল এছেলে বড় হয়ে দেশজুড়ে নাম করবে,মানুষ তাকে চিরদিন মনে রাখবে মরেও অমর হয়ে থাকবে, এই গল্প বড় ছেলেকে বাবা বহুবার শুনিয়েছে।

বাবাঃ বাবা,তুমি হচ্ছ পরিবারের সবার বড়, সবার আদর্শ। তোমার দাদা বলতেন, আগের হাল যে দিকে যায় পরের হাল সে দিকেই যায়। বুদ্ধিমান ছেলে সহজেই বুঝেগেল। বাবার প্রশ্নের ঝটপট উত্তর,বাবা,আমি বড় হয়ে কবি হতে চাই বাবা ছেলের উত্তর শুনে হার্টএটাকের উপক্রম হল, রেগেমেগে গড়গড় করতে করতে গালের মাঝে একটা কষিয়ে থাপ্পড় মেরে বলল,গাধা কোত্থাকার,গর্দভ কোথাকার, আমার সব আশাভরসা জলাঞ্জলি দিলে, এই মুহুর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।

যে কথা সেই কাজ, ছেলে জানে হাকিম নড়েতো হুকুম নড়েনা, তার বাবাকে সে চিনে, ডাকসাইটে আমলা।এককাপড়ে বাড়ি ছেড়ে সে অনেক দূর গ্রামে এক গেরহস্তের বাড়িতে লজিংমাস্টার থেকে পড়াশুনা করেতে লাগলেন, কিসের পড়াশোনা, শুধু কবিতা আর কবিতা।

এই ভাবে দিন যায় মাস যায় কালের নিয়মে অন্যান্য সকল ভায়েরা বাবার ইচ্ছে পূরণ করে অঢেল সম্পত্তি ও টাকাপয়সা ছেলেমেয়ে রেখে সবাই পরপারে চলেগেলেন।

এদিকে বড় ছেলে ভলিউম ভলিউম কবিতা লিখে গেল, একটা কবিতাও কোথাও ছাপা হয়নি, পত্রিকার সম্পাদক নাক সিটকায়, প্রকাশক দূরদূর করে। যাইহোক একজন তার কবিতা পছন্দ করে তাকে ভালবেসেছিল, সেও একদিন বিরক্ত হয়ে এক ডাক্তারকে বিয়ে করে দিব্যি আরামে সংসার করছে।

একদিন কবিও মনের মাঝে এক আকাশ সমান বেদনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করল। মৃত্যুর পর স্রস্টার অনুগ্রহে পরপারে তারা পাঁচভাই ও বাবা পরস্পর মিলিত হল। সবাই মলিন চেহারায় হাজির হল, বাবার মুখেও বিষন্নতা শুধু কবির মুখে তৃপ্তির হাসি। তারা পরস্পর কিছুক্ষণ কথোপকথন করল।

পাঁচপুত্র ও বাবা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখল চারপুত্রের সন্তানেররা তাদের বাবাদের রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পরস্পর বিবাদবিসম্বাদে জড়িয়ে রক্তারক্তি করছে। কেউ তাদের কথা স্মরণও করেনা-- জনগণতো দূরের কথা, মানুষ তার চার সন্তানকে ঘুষখোর বলে গালিদেয়, সমালোচনা করে অভিসম্পাত করে।

অন্যদিকে সারা দেশ জুড়ে কবির জন্মদিন মৃত্যু দিবস পালন হয়, সরকার তাকে মরণোত্তর বিভিন্ন পদকে ভূষিত করতে লাগলেন, প্রকাশকেরা তার কবিতার বই বের করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাচ্ছে, দেশের সকল ক্লাসের পাঠ্যক্রমে কবির কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছেলেমেয়েদের মুখেমুখে কবির কবিতা। বিসিএস ও অন্যান্য চাকুরী  প্রার্থীরা গড়্গড় করে কবির নাম, জন্ম মৃত্যু তারিখ কবিতার নাম কাব্য গ্রন্থের নাম কবির বাবার নাম কেউ কেউ দাদার নামও খুঁজতে থাকেন মুখস্থ করার জন্য! এই কীর্তি দেখে পিতার আত্মা খুব সন্তুষ্ট হয়ে কবিছেলেকে বলল,বাবা, আমি মরিয়া বুঝিতে পারিয়াছি কৃতিসন্তান কাহাকে বলে, এই কথা বলে সকলেই অদৃশ্য হয়ে গেল, কেবল কবিই দেশ জুড়ে বিচরণ করতে লাগলেন, মানুষের মাঝে অমর হয়ে রইলেন, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। জয়তু কবি।

Comments & Ratings

No Comment Yet
Overall Score: 10.0 / 10 |

Rate this Blog

Overall Score: 10.0 / 10 |